মিরারচটির দুই ইমামকে বিদায়ী সংবর্ধনা

দীর্ঘ ১৯ বছর ইমামতি ও মক্তবের শিক্ষকতা শেষে বিদায় নিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলার ৮ নং ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়নের মিরারচটি জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। একই মসজিদে ১০ বছর খেদমত করে বিদায় নিয়েছেন সহকারি ইমাম হাফিজ মাওলানা সৈয়দ সালিম আহমদ।

তাঁদের বিদায় উপলক্ষে ২৩ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বাদ জুম্মা মিরারচটি জামে মসজিদে মক্তবের সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ, মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

মিরারচটি গ্রামের মুরব্বি সৈয়দ নুরুল হকের সভাপতিত্বে ও সৈয়দ নাজিম উদ্দীন খছরুর পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুরুব্বি সৈয়দ ইসলাম উদ্দিন, মাওলানা সৈয়দ আবুল হারিছ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, হাফিজ মাওলানা সৈয়দ সালিম আহমদ, নবনিযুক্ত ইমাম মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ প্রমুখ।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাওনালা সৈয়দ আব্দুল মালিক ও সৈয়দ হাফিজ কাওছার আহমদ।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট সৈয়দ শরফ উদ্দিন, মাস্টার সাঈদুন নূর, মাওলানা সৈয়দ এবাদুর রহমান প্রমুখ। মক্তবের শিশুরা ও মিরারচটি মিফতাহুল কুরআন কওমী মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ সহ সর্বস্তরের মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ ইসলাম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ব্যক্তিগত কারণে বারবার ইমামতি ছাড়তে চাইলেও গ্রামবাসী তাঁকে এতদিন ছাড়েননি। অবশেষে ১৯ বছর ইমামতির পর তিনি এই মসজিদ থেকে ইমামতি ছাড়লেন। একই মসজিদে তাঁর এই দীর্ঘ সময়ের ইমামতি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মিরারচটির ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে সম্মানের সহিত বিদায় ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কানাইঘাট গণশিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি এবং শাহবাগ মাদানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সৈয়দ আবদুল মালিক। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ”..মূলত কানাইঘাট গণশিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকেই স্পৃহা পেয়ে আজ আমার গ্রামের দীর্ঘ ১৯ বছরের ইমামকে বিদায় জানাতে মসজিদের প্রাক্তন মক্তবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাত্র দুই সাপ্তাহের ব্যাবধানে আজ ৫০ হাজার টাকা নগদ হাদিয়া সহ আরও গিফট সামগ্রী ও সম্মাননা স্মারক দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। এটিও অত্র ফাউন্ডেশনের সাফল্য বলে আমি মনে করি।

জানা যায়, মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর ব্যক্তিগত অপারগতার বিদায়ের কারণে তাঁর সাবেক শিক্ষার্থীরা তাঁকে না জানিয়েই এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন । তাঁরা চেয়েছেন এমন একজন মহৎ ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। বিদায় অনুষ্ঠানে নানা বয়সী মানুষ স্মৃতিচারণা করেন।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, অনেক কম বয়সে তিনি এই মসজিদে ইমামতি শুরু করেছিলেন। তাঁকে যাঁরা ইমামতিতে নিয়েছিলেন, সেসব মুরব্বিদের বেশিরভাগই আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাঁদের সন্তানেরা, গ্রামের অন্যরা তাঁকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।

গ্রামের মুরুব্বিরা বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও হাফিজ সালিম আহমদ তাঁদের গ্রামেরই পরম আপনজন হয়ে ছিলেন। তারা ছিলেন আমাদের অভিভাবকের মতো। গ্রামের বয়োজেষ্ঠ্য ময়মুরুব্বীদের নিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৯ বছর অত্র এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সুসম্পর্কের মাধ্যমে উনারা তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

মাওলানা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ৮নং ঝিংগাবাড়ি ইউনিয়নের ফখরচটি গ্রামের বরেণ্য আলিম মাওলানা ছইফ উল্লাহর ছেলে। ২০০৫ ঈসায়ী থেকে ইমামতি ও এলাকার মক্তবে পড়ানো শুরু করে দীর্ঘ ১৯ বছর পর বিদায় নিয়েছেন তিনি। বিদায়কালে তাঁর মক্তবের শিক্ষার্থী, মসজিদ কমিটি ও এলাকার মানুষ তাকে অর্থ, উপহার সামগ্রী ও বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করেন।