মক্তবের শিক্ষা আমাদের অন্যতম সংস্কৃতি

আব্দুর রউফ আশরাফ:

মক্তব ইসলাম শিক্ষার প্রাথমিক স্তর। মক্তব শিক্ষা হচ্ছে ইসলামের আদি এবং মৌলিক শিক্ষা। ধর্মীয় জ্ঞাণ অর্জনের গোড়া মজবুতির সোপান।

এখান থেকে মুসলমানের মুসলমানিত্ব ঠিক হয়। কালেমা-কালাম, বিশুদ্ধ কুরআন শেখার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে যাদের পড়ার তৌফিক হয়েছে তাদের ভিতরে ধর্মের বাতি জ্বলছে। যে মা-বাবা ভোরবেলায় আরামের ঘুম ত্যাগ দিয়ে সন্তানদের মক্তবে পাঠায়,তাদের মা-বাবা ইসলামের বীজ বপন করে প্রশান্তির অক্সিজেন নেয়।

এই কনকনা শীতে মক্তবে পড়ানো সবার ভাগ্যে জুটে না। যাদের ছেলেমেয়ে মক্তবে যায়,তাদের মা-বাবা ভাগ্যবান। আর যে উস্তাদগণ সল্প অর্থ পেয়ে, না পেয়ে ভোরের মহামূল্যবান সময় দিয়ে ইসলামের বাতি জ্বালাচ্ছেন;নিঃসন্দেহে তারা আল্লাহর কাছে খুব পছন্দের এবং তিনি যাজায়ে খায়ের দান করবেন।

সবাহি মক্তব একটি নিরবধি সংগ্রাম। একটি বিপ্লব। কল্পনাতীত শিক্ষা। অপশিক্ষার বিরুদ্ধে সু-শিক্ষার ভিত্তি নির্মাণ। শিশুরা যখন আজেবাজে কল্পনায় বিভোর থাকে, তখনই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন দেখায় এই সবাহি মক্তবগুলো। মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন,শিশুদের মেধা সতেজ,কোমল ও কাঁদা মাটির ন্যায়। শিশুদের মেধায় যা বপন করবেন, খুব দ্রুত সেটার ফলন দেখা দেয়। এবং গোড়া মজবুতি থাকে। শিশুদের মস্তিস্ক বিস্তৃত হয়।

প্রাচীনকালের ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়, অনেক রাজা-বাদশাহ, আমির-উমারা, অলি-দরবেশ, পীর-মাশায়েখ, শিক্ষক-সাংবাদিক, কৃষক-শ্রমিক মক্তবের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেছেন। অনেক লোককে বলতে শোনা যায়, আমি জীবনে কোনোদিন স্কুলের ধারে-কাছে যাইনি। কিন্তু মক্তবে গিয়েছি, এমন কথা বলার মতো মানুষ সমাজে পাওয়া মুশকিল। এই হলো মক্তব শিক্ষার প্রভাব ও বিস্তৃতি। এভাবেই মক্তব শিক্ষা মুসলিম সমাজের অন্যতম সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য মক্তব শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

শিশুদের নৈতিক শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞাণ অর্জনের মক্তব ধীরেধীরে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভোরবেলায় শিশুদের মক্তবে যাওয়ার চিরাচরিত দৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলায় খুব একটা দেখা যায় না। মসজিদের বারান্দাগুলো দরুদ শরিফ, হামদ-নাত আর আলিফ-বা-তা,দোয়া,ছন্দবদ্ধ বাক্যে মাসআলা-মাসায়েলের মিষ্টি মধুর সুরে মুখরিত হয় না। শোনা যায় না, শত কণ্ঠে সকালে আগের ন্যায় শুনা যায় না, কুরআনের আওয়াজ।

এক সময় মক্তবের শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলা হতো। মক্তব শিক্ষার বিশেষ কিছু গুণ আজোও দৃশ্যমান। বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি
,মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও মুরুব্বিদের সালাম এবং সম্মান দেওয়া, সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করে তুলা। সহিহ-শুদ্ধভাবে সুরা-কেরাত পড়ার যোগ্যতা অর্জন, বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের মাসয়ালা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে অজু, গোসল, তায়াম্মুম, দোয়া-দরূদ, কালেমা, নামাজ, রোজা, মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফনের কাপড় পড়ানো, দাফন করার নিয়মসহ বিভিন্ন খুঁটি-নাটি বিষয় শিখানো হয়। ইসলামের ইতিহাস এবং পরকালের ভয় ভীতি সম্পর্কে জ্ঞাত করা হয়। অর্থাৎ মুসলামন হিসাবে যতটুক জ্ঞাণ অর্জন করা জরুরী সিংহভাগ এই মক্তব থেকে শিখানো হয়।

আজ দিনদিন মক্তব শিক্ষার প্রতি চলে আসছে আমাদের অবহেলা। আজোও যদি চিরাচরিত সেই মক্তবের শিক্ষা পুঙ্খানুপুঙ্খ শিখানো হয়। তাহলে আগামী প্রজন্ম নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সু-সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।

সংগৃহিত: আওয়ার ইসলাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *